Friday, 06 June, 2025
Logo
বিজ্ঞাপন
যাবতীয় রড, সিমেন্ট, ইট, বালি ও কনা পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় করা হয় ।। যোগাযোগ- মেসার্স হোসেন ব্রাদার্স/ জাকের ট্রেডার্স।। সোবান মঞ্জিল, বসুর হাট রোড, সিনেমা হলের পাশে, দাগনভুইয়া, ফেনী। প্রোপ্রাইটর জাকের হোসেন আলমগীর ০১৭১১-৯৬২৯২৫।। ০১৮৭১-৯৩০০০৮ মেসার্স কে আহাম্মদ এন্ড সন্স! পরিবেশক,বি এম, ডেল্টা ও ইউনি এল পি গ্যাস! যোগাযোগ- বসুরহাট রোড, সিনেমা হলের সামনে, দাগনভুইয়া, ফেনী- ০১৭১১-৩০৪৮৭৩, ০১৮৩৯-৩৯৭১৩০! দাগনভুইয়া ফিজিওথেরাপী সেন্টার, একটি আধুনিক বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস ও মুখ বাঁকা চিকিৎসা কেন্দ্র। ঠিকানা- সোবহান মঞ্জিল, বসুর হাট রোড। (সাবেক ঝর্না সিনেমা হলের পাশে)। দাগনভুইয়া, ফেনী। 01818-019684, 01721-910110

নদীর তীব্র ভাঙনে ভিটেমাটি হারাচ্ছে সোনাগাজী উপকূলের বাসিন্দারা

শহীদুল ইসলাম, সোনাগাজী

প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে


গর বাড়ি বিলীন হচ্ছে নদী গর্বে

ছোট নদীর অব্যহত ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারাচ্ছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর ফসলি জমি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষ, উৎকণ্ঠিত বাসিন্দারা ভাঙনের দৃশ্য দেখছেন নদীর পাড়ে বসে। 

নদীর তীব্র ভাঙনে মানুষজন ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ছোট ফেনী নদীর জোয়ারের পানির তোড়ে কাজীরহাট থেকে বাংলাবাজার পাকা সড়কের প্রায় ৫০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে বাজারের উত্তরাংশে বসবাস করা মানুষজন একমাত্র রাস্তাটি হারিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সোনাগাজী ও পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কৃষিনির্ভর ব্যবসায়ীরা। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর, মিয়াজির ঘাট ব্রীজ, ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা, কুঠিরহাট কালিমন্দির, কাটাখিলা,বগাদানা ইউনিয়নের জেলেপাড়া, আউরারখিল, আদর্শগ্রাম, কাজীরহাট স্লুইসগেট, আলমপুর,চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চরদরবেশ, উত্তর–পশ্চিম চরদরবেশ, চরসাহাভিকারী, চরইন্জুমান, তালতলী, তেল্লারঘাট, ফকিরাপুল, ইতালি মার্কেট এলাকা সাহেবের ঘাট ব্রীজ এলাকায় ব্যপক ভাঙনের কবলে পড়েছে, ইতিমধ্যে কয়েক'শ পাকা আধাপাকা রাস্তা রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

গত ২০২৪ইং সনের আগষ্ট মাসে ভয়াবহ বন্যায় পানির তীব্র স্রোতের মুখে মুছাপুর রেগুলেটরটি ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণের মূলত ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ছোট ফেনী নদীসহ আরও দুটি নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে ফেনী ও নোয়াখালীর তিনটি উপজেলা। এতে কেবল ফেনী জেলারই ১৩ কিলোমিটার অংশে তীব্র ভাঙন হচ্ছে। একইভাবে ভাঙনকবলিত হয়ে পড়েছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাও। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে এখনো নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পূর্ণাঙ্গ চিত্র নেই।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট ফেনী নদীর ভাঙন রোধ ও সমুদ্রের লোনাপানির জোয়ার থেকে রক্ষার জন্য সোনাগাজীর কাজীরহাটে নদীর ওপর ১৯৬১ সালে একটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক তদারকির অভাবে নির্মাণের ৪১ বছর পর ২০০২ সালে রেগুলেটরটি নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালে ৮ মার্চ ছোট ফেনী নদীতে কাজীরহাট রেগুলেটরের ২০ কিলোমিটার ভাটিতে মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালে রেগুলেটরটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণের ১৪ বছরের মাথায় ২০২৪ সালের ১৭ আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে নদীর দুই পাড়েই এখন তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।

১৯৬১ সালের কাজীরহাট রেগুলেটর ও ২০১০ সালে নির্মিত মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর পাড়ে রেগুলেটর না থাকায় জোয়ারের পানি ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে গত বছরের বন্যার পর থেকে ভাঙন বেড়েছে বহুগুণ।

গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ফেনীর সোনাগাজীতে বিলীন হওয়া মুছাপুর রেগুলেটর এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন। ওই সময় উপদেষ্টা ওই এলাকায় গণশুনানিতে অংশ নেন। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও কার্যত আট মাসেও কোনো পদক্ষেপ দেখছেন না স্থানীয় লোকজন।

চরদরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চরসাহাভিকারী গ্রামের বাঁশবাজার এলাকায় ভাঙনের শিকার চল্লিশোর্ধ্ব নারী জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, তীব্র ভাঙনে তাঁর ঘরের কিছু অংশ নদীতে চলে গেছে। তাঁর মতো এই এলাকার ৩৫ থেকে ৪০ পরিবার নদীভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। 

চরসাহাভিকারী গ্রামের অটোরিকশাচালক মো. নুর নবী (৪৫), কৃষক আবু তাহের (৫৮), হালিমা খাতুন (৫০), সুজা মিয়া (৬০), আনোয়ারা বেগম (৫৫), আবদুল মান্নান (৬০), জুলহাস (৪২), দুলাল মিয়া (৫৮) নদীভাঙনের শিকার হয়ে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।

চর মজলিশপুর ইউনিয়নের মিয়াজীঘাট গ্রামের দিনমজুর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর বাড়িসংলগ্ন মিয়াজীঘাট থেকে কাজীরহাট মুছাপুর গেট পর্যন্ত সড়কটি নদীভাঙনে বিলীন হতে চলেছে। সড়কের এক মাথার ৯০ শতাংশ নদীতে বিলীন হওয়ায় সড়কসংলগ্ন তাঁর বাড়িটি যেকোনো সময় নদীতে তলিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে তাঁর প্রতিবেশীদের তিনটি বাড়ি নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চরবদরপুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছোট ফেনী নদীর অব্যহত ভাঙনে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তাটি অনেকাংশেই ভেঙে গেছে, দৈনিক শতশত যানবাহন চলাচল করে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তাটি দিয়ে। ভাঙন আর একটু অগ্রসর হলেই এলাকার মানুষের ইবাদতের একমাত্র মসজিদটি ও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। 

সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন বলেন, নদীভাঙনের কারণে এলাকায় নদীতীরের অনেক মানুষ ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ নদীতীরে গাছ ও বাঁশ দিয়ে বাঁধ তৈরি করে বসতবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছেন। এভাবে নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে সড়কটিও নদীতে চলে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীভাঙন রোধে দৃশ্যমান কোনো কাজ করছে না। 

এদিকে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় বাঁকা নদী সোজাকরণ, এলাকার মানুষের বসতবাড়ি, কৃষিজমি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চরমজলিশপুর ইউনিয়নবাসীর পক্ষে সাতটি স্থান চিহ্নিত করে সম্প্রতি সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রবিউল হক।

সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, নদীভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে নদীর পাড়ে এসে ঘুরে তথ্য নিয়ে যান। তবে কাজের কাজ কিছুই চোখে পড়ে না।

যা বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ছোট ফেনী নদী, ফেনী নদী এবং কালিদাস পাহালিয়া নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে ফেনীর চার উপজেলা। এতে ১৩ কিলোমিটার অংশে ভাঙন হচ্ছে। ছোট ফেনী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘বি স্ট্রং’ নামে একটি প্রকল্প সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়েছে। ১৭১ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি কাজ অচিরেই শুরু হবে। কাজটি শেষ হলে এ অঞ্চলের মানুষ নদীভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাবে।

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত